কলকাতার পাতালে (প্রথম দুই পরিচ্ছেদ)

                                                                       
  পার্ক স্ট্রীট মেট্রোর কাছে ট্রাফিক জ্যাম‍ বছর দশেক আগেও এটা রোজকার ব্যাপার ছিল ইদানিং যদিও কলকাতায় ট্রাফিক জ্যাম ফুচকাওয়ালাদের চেয়েও বিরল হয়ে গেছে

  সামনে আর পেছনে কয়েকটা গাড়ি বিরক্ত হয়ে হর্ন বাজাচ্ছে সত্যর কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড় গোটা রাত ডিউটি করার পর একটানা দশ মিনিটও স্টিয়ারিং ধরে থাকা যাচ্ছে না ক্লান্তি পেয়ে বসছে বয়স হচ্ছে বোধহয় বিয়াল্লিশ পেরিয়ে যাওয়ার পর এরকম না হওয়াই অস্বাভাবিক সত্য সীটে হেলান দিয়ে বসলো

  গাড়ির মিউজিক সিস্টেমের পাশে জি.পি.এস. মনিটরে বীপ করে একটা শব্দ হলো কন্ট্রোল থেকে জ্যামের পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট এসেছে সত্য ভুরু কুঁচকে তাকালোলেনটা খুলবে আরও সাড়ে ছ’ মিনিট পরে এতক্ষণ আটকে থাকা সত্যিই অস্বাভাবিক বড় অ্যাক্সিডেন্ট কিছু হলো নাকিতাহলে তো তারও ডাক পড়তে পারে আট ঘন্টা অফিসে বসে থেকেও রেহাই নেই!

  লেন খুলতে এখনও পুরো ছ’ মিনিট বাকি আর এর মধ্যেই মাথাটা ঢুলে আসছে নাঘুমিয়ে পড়লে চলবে না সত্য গাড়ির ডেকের এফ এম রেডিওটা চালু করে দিলো হয়তো ট্রাফিক জ্যামের কারণ নিয়ে কোনও খবর পাওয়া যাবে অবশ্য ট্রাফিক কন্ট্রোলে একটা ফোন করলেও হতকিন্তু এই মুহুর্তে ওদের সাথে বকবক করার এক ফোঁটা ইচ্ছে নেই তার

  পরপর তিনটে রেডিও স্টেশনে বিজ্ঞাপন চলছে আরও গোটা দুয়েক গানের চ্যানেল পেরিয়ে একটা খবরের চ্যানেল পেল সত্যসংবাদ পাঠিকা মিষ্টি গলায় সকালের সুন্দর আবহাওয়ার কথা আউড়ে চলেছেন সত্য অস্থিরভাবে স্টিয়ারিংয়ের একটা অংশ আঙ্গুল দিয়ে খুঁটতে লাগলো

  গত দুই দশকে কলকাতা মায় দেশের ভোল পালটে গেছে ফ্লাইওভার আর সাবওয়ের সংখ্যা কুড়ি গুণ বেড়েছেবড় শহরের সংখ্যা হয়েছে তিন গুণ ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে যোগাযোগের মুখ্য মাধ্যমএবং তার জেরে স্কুল কলেজে বই-খাতার বদলে ল্যাপটপ আর ট্যাবলেট কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েছে জোর কদমে ব্যাটারীচালিত হাইব্রীড গাড়ির সংখ্যা এখন পেট্রোলে চলা গাড়ির প্রায় সমান কিন্তু একটি জিনিস যেমনকার তেমন থেকে গেছে- রেডিও গাড়ি চালানো বা অন্য অনেক কাজের সময় টিভি বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় নাকাজেই রেডিও পেয়েছে একদল নিরুপায় শ্রোতাকে যারা সংখ্যায় নেহাৎ কম নয় এখন তো আবার ঘরে ঘরে সস্তা ট্রান্সমিটার লাগিয়ে বা জনপ্রিয় মোবাইল হ্যান্ডসেট স্কাই-ফোন এর ব্রডকাস্ট সিস্টেম ব্যবহার করে নিজস্ব অ্যা‌‍মেচার রেডিও স্টেশন বাজানো ফ্যাশন হয়ে গেছে এর ফলে হাজার স্টেশনের ভিড়ে খবরের বা খেলার চ্যানেল খুঁজতে মাথা খারাপ তো হয়েই যায়তার ওপর এইসব চ্যানেলে মিউজিক ও অডিও-বুক পাইরেসির বাড়বাড়ন্ত রুখতে পুলিশের ঘুম উধাও হয়ে গেছে ভাগ্যক্রমে ওইসব কেস দেখার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্ট তৈরী হয়েছেনইলে সত্যেরও ঘুমোনোর জো থাকতো না অবশ্য এই মুহুর্তে ঘুমোনো অনুচিত হওয়া সত্যেও তার মাথাটা স্টিয়ারিংয়ে ঢুলে পড়েছে 

  একটা কর্কশ শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো সত্য চমকে উঠে গাড়ির ডেকে রাখা মোবাইলের স্ক্রীনটার ওপর ঝুঁকে পড়লোঅফিস থেকে এসিপি সাহেব কল করছেন সত্য আলতো করে মাথাটা দু’বার ষ্টিয়ারিংয়ে ঠুকলো হয়ে গেল ঘুম আজকের মতো

  “কি হেকোথায় আছো?” এসিপি সুজিত গুপ্ত গোটা রাত বেশ আরাম করে ঘুমিয়েছেন বলে তাঁর গলাটা বেশ ফুরফুরে শোনালো

সত্য জানে এই প্রশ্নটা নেহাত সৌজন্যের খাতিরে করা সেন্ট্রাল জি.পি.এস. সিস্টেমের দৌলতে পুলিশ এখন দেশের সব ক’টা বড় শহরের প্রতিটি গাড়ির গতিবিধির ওপর চব্বিশ ঘন্টা নজর রাখতে পারে এসিপি তার বর্তমান অবস্থান জানেন বলেই এই সময় তাকে ফোন করেছেন

  “পার্ক স্ট্রীটে স্যারজ্যামে ফেঁসে আছি,” বললো সত্য

  “হ্যাঁওই জ্যামের ব্যাপারেই একটা কাজ পড়েছে বুঝলে...”

  “কোনো অ্যাক্সিডেন্ট কিছু হয়েছে নাকি স্যার?” সত্য এবার একটু চিন্তায় পড়লো

  “না নাসেরকম কিছু নয়,” বললেন সুজিত গুপ্ত “সামান্য ব্যাপারশুধু গিয়ে একবার দেখে এসে একটা ছোট্ট রিপোর্ট দিলেই হবে ফর্ম্যালিটি মাত্র”

  “স্যারআমি তো এই সবে ডিউটি করে ফিরছি! অন্য কেউ গেলে হবে না?” সত্য ছাড়া পাওয়ার একটা শেষ চেষ্টা করলো

  “ঘটনা যেটা হয়েছে সেটা হলোএই একটু আগে রাজ ভবনের সামনে রাস্তার একটা অংশ ধ্বসে গেছে,” বললেন এসিপি কাজেই বুঝতে পারছখুব সিরিয়াস কিছু না হলেও একটা রিপোর্ট যত জলদি সম্ভব জমা করে দিলেই ভালো তাছাড়া পুলিশ রিপোর্ট না হাতে পেলে কর্পোরেশন থেকে রাস্তা মেরামতের কাজও শুরু করবে নাআর ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট থেকে অলরেডি বাঁচাও বাঁচাও বলে ফোন আসতে শুরু করেছে!”

  “কিন্তু এটা লোকাল কোনো অফিসারকে দিয়ে করালেই তো হত! সি আই ডি তো এইসব ব্যাপার এমনিতে দেখে না!”

  “ঠিককিন্তু এটা জেনারেল কোনো রাস্তা নয়,” এসিপি গলা নামলেন “হাজার হোকব্যাপারটা ঘটেছে রাজ্যপালের বাড়ির সামনে বুঝতেই পারছসময়টা ভালো নয় পুলিশমিনিস্ট্রি সবাই এমনিতেই টেনশনে থাকে একজন সিনিয়র সি আই ডি ইন্সপেক্টরের রিপোর্ট এইসবক্ষেত্রে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য যাই হোকবেশিক্ষণ লাগবে নাতাড়াতাড়ি দেখে এলেই হবেরিপোর্ট-টা বরং অনলাইন ফাইল করে দিলেই চলবে ঠিক আছেরাখছি

  ট্রাফিক লাইটের রং বদলে সবুজ হয়েছে সত্য ব্যাজার মুখে গাড়ি স্টার্ট করলো ক্লান্তি এত যে সরেজমিন তদন্ত তো দুরে থাকড্রাইভ করতেও ইচ্ছা করছে না একটু টাকা জমিয়ে একটা অটো-পাইলট কার কিনলে হয়এই একটানা স্টিয়ারিং ঘোরানো থেকে অন্ততঃ রেহাই মিলবে তবে এই বাজারে মেয়ের বিদেশী বোর্ডিং স্কুলের খরচা সামলে তার ওপর সঞ্চয় করা এভারেস্টে চড়ার চেয়েও কঠিন সত্য নেহরু রোড ছেড়ে গুরু নানক সরণী ধরলোএখান থেকে রাজ ভবন পৌঁছানোর এটাই শর্টকাট

  এখানে রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা স্পীড একটু বাড়িয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে সত্য মনে মনে রোজকার অভ্যেসবশতঃ গোটা দিনের রুটিন নিয়ে ভাবতে লাগল

  ঘরে এখন সে একা তার স্ত্রী গার্গী স্কটল্যান্ডে গেছে তাদের একমাত্র মেয়ে ওমীষা-র বোর্ডিং স্কুলে ডিসেম্বর এল বলেআর সপ্তাহখানেক পরে বড়দিনের লম্বা ছুটিতে তার মেয়ে ঘরে আসবে পুরো এক বছর বাদে ওদেশে সকাল হতে এখনও কয়েক ঘন্টা দেরিতারপরেই গার্গী একবার ভিডিও চ্যাট করবে বলেছে সঙ্গে ওমীষা-ও থাকবে কাজেই ঘুমোনো যাবে না আর তার আগে তার বাল্যবন্ধু ও সহকর্মী কুশের বাড়িতেও একবার যেতে হবেলুচি বেগুনভাজার নেমন্তন্ন আছে মাত্র দু’ মাস আগে দরখাস্ত দিয়েই ও ক্যাজুয়াল লিভ আদায় করতে পেরেছে আজকের দিনটার জন্যতারই উৎসব

  রাস্তার একদিক পুলিস কর্ডন দিয়ে ঘিরে রেখেছে সত্য গিয়ে কার্ড দেখাতেই পাহারাদার কনস্টেবল সরে দাঁড়াল একজন সাদা উর্দিপরা সাব-ইন্সপেক্টর এগিয়ে এসে তাকে স্যালুট করলো সত্য জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় হয়েছে?” লোকটা তাকে রাস্তার মাঝামাঝি একটা জায়গা দেখিয়ে দিলো সত্য এগিয়ে গেল

  রাস্তার মাঝখানে একটা বড় চাকলা ভেঙে পড়েছে পিচের মোটা স্তর আর তার তলায় গিটিপাথর গর্তের মুখে দাঁত বের করে আছে গর্তটা অন্ততঃ ছ’-সাত ফুট গভীরতলা দিয়ে কাদা মাখা জল বয়ে যাচ্ছে নিচে নিশ্চয়ই হাইড্রেন জাতীয় কিছু আছেআজকালকার সিকিউরিটি প্রোটোকল অনুযায়ী কোনো ভি ভি আই পি’র বাড়ির সামনে এত বড় নর্দমা থাকার কথা নয়তাহলে এটা এখানে কি করছেসত্য ভুরু কুঁচকে ভাবলো কয়েক সেকেন্ড

  সাব-ইন্সপেক্টর একদিকে দাঁড়িয়ে দুটো লোকের সঙ্গে কথা বলছেবোধহয় প্রত্যক্ষদর্শী সত্য সেদিকে এগিয়ে গেল 

কি জন্যে হয়েছে মনে হচ্ছে?” সত্য জিজ্ঞাসা করলো

  “স্যার এরা যা বলছে তাতে ভূমিকম্প জাতীয় কিছু হয়েছিল,” সাব-ইন্সপেক্টর বললো “এরা আশেপাশেই ছিলোআর রাস্তায় কংক্রিটের চাকলা ভেঙ্গে পড়ার শব্দও শুনেছে

  “ভূমিকম্পকি রকমকত জোরে?” সত্য সামনে দাঁড়ানো লোকগুলোকে জিগ্যেস করলো

  “বেশ জোরে স্যারআমার টেবিলে রাখা চা উল্টে গেছিলো প্রায় দু’-তিন সেকেন্ড স্থায়ী ছিলো ঝটকাটা,” গার্ডের উর্দি পরা একটা লোক বললো পাশে দাঁড়ানো আরেকটা লোক সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল

তুমি গেটে ডিউটিতে ছিলে?” সত্য প্রশ্ন করলো

  “হ্যাঁ স্যারআর আমার সাথে এও ছিলো এ এখানকার মালি,” পাশের লোকটাকে দেখিয়ে গার্ড বললো

  “হুম,” ভুরু তুললো সত্য “তা কটা নাগাদ হলো ভূমিকম্পটা?”

  “সাড়ে ছ’টা স্যার,” মালি মুখ খুললো “ঘন্টাখানেক আগে”

  “তাইঠিক বলছো?” সত্য মালির দিকে এক পা এগোল লোকটা ভয়ে সামান্য সিঁটিয়ে গেল সত্য প্রশ্ন করলো, “তা তুমি কোথায় ছিলে তখন?”

  “ওর সাথে স্যারগেটের কাছেওর টেবিলে বসে চা খাচ্ছিলাম,” বললো মালিটা

  “এখানে কেন ছিলেএটা তোমার ডিউটির সময়?”

  “না স্যারমানে... হ্যাঁ স্যার মানে আমি এখানেই থাকি স্যারকোয়ার্টারে... আমরা রোজ সকালে চা খাই...”

  “হ্যাঁ স্যার,” গার্ড বলে উঠল “ও সত্যি কথা বলছে স্যার!”

  “আমি গোটা রাত জেগে ডিউটি করেছি,” বললো সত্য “এক সেকেন্ডের জন্য ঘুমোইনি তুমি বলছ এত জোরে একটা ভূমিকম্প এল যে তোমার চা উল্টে গেলআর আমি একবার টেরও পেলাম না?”

  “না স্যারমানে...” মালি কথা হারিয়ে ফেলল

  “আমাদের কাছেও ভূমিকম্পের কোনও রিপোর্ট নেই স্যার,” সব-ইন্সপেক্টর বলে উঠলো “এরা পুরো মিথ্যে বলছে

  “বিশ্বাস করুন স্যারআমরা সত্যি বলছি,” হাত জোড় করে বললো গার্ড “সার্ভেইলেন্স ক্যামেরাতে তো ভিডিও নিশ্চয়ই উঠে গেছে কিভাবে কি হয়েছে... আপনারাই দেখে নিন না ঠিক কি হয়েছিলো!”

  “ফুটেজ পাওয়া গেছে?” সত্য সব-ইন্সপেক্টরের দিকে ফিরল

  “পাওয়া যাবে স্যারএকটা টিম পাঠানো হয়েছে সার্ভার রুমে ক্যামেরা ফীড খতিয়ে দেখার জন্য”

  “এই দুজন ছাড়া আর কেউ কিছু দেখেনি?”

  “রাস্তায় কিছু লোক নিশ্চয়ই ছিলোকিন্তু পুলিশ দেখে ভেগেছে”

  “রাজ্যপাল নিজে কিছু বলেছেন?”

  “উনি ব্যস্ত আছেন”

  “তাহলে তো কথাই নেই,” বললো সত্য “এদের দু’জনকে আপাততঃ বসিয়ে রাখোআর ভিডিও ফুটেজ যত জলদি সম্ভব বের করো সিকিউরিটি প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টে একটা খবর দাওএইরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি রেসিডেন্স-এর সামনে এইরকম একটা নর্দমা কি করছে সেটা ওদের দেখা উচিত আর হ্যাঁএকটা ফরেনসিক টিমকে আসতে বলে দাওনর্দমার জল পরীক্ষা করে দেখতে হবে”

  “মানে?” সাব-ইন্সপেক্টর একটু চিন্তায় পড়ল “ফাউল প্লে কিছু আছে ভাবছেন নাকি স্যার?”

  “একটা ভূমিকম্প যার এত জোর যে কংক্রীটের রাস্তা ফাটিয়ে দিতে পারেসেটার কোনও রিপোর্ট করা হলো নাএতক্ষণে তো সেটা হেডলাইন হয়ে যাওয়ার কথা!” সত্য গম্ভীর মুখে বললো

  “ডিনামাইট জাতীয় কিছু?” বললো সাব-ইন্সপেক্টর

  “এখনই অত শত ভাবার সময় আসেনিতুমি খবরগুলো পাঠাও”

  সাব-ইন্সপেক্টর তড়িঘড়ি নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল আর সত্য ফিরে গেল গর্তটার কাছে নর্দমাটা চৌকোভেতরটা পাথর দিয়ে বাঁধানো দেখে মনে হয় ব্রিটিশ আমলের আর ভেতরের জলটা বোধহয় সরাসরি গঙ্গা থেকেই আসছে ঘোলাটে জলে অল্প অল্প ঢেউ উঠছেআর স্রোতের ধাক্কায় নর্দমার এককোণে এসে ঠেকেছে একটা মরা মাছ

  মরা মাছঅদ্ভূত ব্যাপার! সত্য ঝুঁকে পড়ে ভালো করে দেখতে গেলআর তখনই বেশ কয়েকটা মিনি-ট্রাকের জোরালো শব্দ তাকে প্রায় চমকে দিলো

 প্রায় চল্লিশজন সেনা জওয়ান দুটো ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে দিয়ে নেমে এলোআর মুহুর্তের মধ্যে গোটা এলাকাটা ঘিরে থাকা পুলিশ কর্ডন সরিয়ে নিজেদের কর্ডন বসাতে লাগলো ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি হলো যে সাব-ইন্সপেক্টর আর তার কনস্টেবলরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল রাস্তার উল্টোদিকে ইতিমধ্যে মজা দেখতে কিছু লোক জমে গেছে সেদিক থেকে একটা মন্তব্য সত্যর কানে এলো, “ওই দ্যাখএসে গেছে মামার মামা!”

  সত্য এর আগে বেশ কয়েকটা তদন্তে আর্মির সঙ্গে কাজ করেছেকিন্তু এরকম পরিস্থিতির মুখে কখনও পড়েনি অপমানে তার কান লাল হয়ে উঠলো

  একজন লেফটেন্যান্ট কাজের তদারকি করছে সত্য তার দিকে এগিয়ে গেল লেফটেন্যান্ট গম্ভীর মুখে তার দিকে ফিরল

  “সুপ্রভাত অফিসারআমি লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সমীর বসু এভাবে দেখা হওয়ায় দুঃখিতকিন্তু আমাদের কাছে অর্ডার আছে এই তদন্তের ভার নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ারএই যেক্লিয়ারেন্স পেপার”

  লেফটেন্যান্ট তার হাতে একটা কাগজ তুলে দিয়ে গট গট করে রাজ ভবনের গেটের দিকে হাঁটা দিলো সত্য কাগজের তলার দিকের সরকারি সীলটার ওপর চোখ বোলালোঅনুমতিপত্রটা জারি হয়েছে রাজ্যপালের দফতর থেকে

  সাব-ইন্সপেক্টর তার দিকে এগিয়ে এল সত্য মৃদু হেসে কাগজটা তার দিকে এগিয়ে ধরলো, “এবার বোঝা গেল রাজ্যপাল কি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন”

  সাব-ইন্সপেক্টর কাগজটা নিয়ে ভুরু কুঁচকে দেখল, “কিন্তু স্যার আর্মি তো এভাবে কখনও... তবে কি... আপনি কি...”

  “আমার অনুমান সঠিক ছিল বলেই মনে হচ্ছে,” সত্য বললো “ন্যাশনাল সিকিউরিটির ব্যাপার না হলে আর্মি কখনও মাথা ঘামায় না যাক গেআমাদের কাজ কমলো কোনও রিপোর্টও লিখতে হবে নাশুধু এই কাগজটা জমা করে দিলেই হবে”

  সাব-ইন্সপেক্টর সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল সত্য আড়চোখে গর্তটা একবার দেখল দু’জন সেনা জওয়ান গর্তের মধ্যে নেমে পড়তে চলেছে সত্য অবাক হয়ে গেল যে গর্তে বোমা ফাটানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছেতার মধ্যে কেউ হুট করে ওভাবে নেমে পড়তে যায়যদি কোনও না ফাটা বোমা এখনও থেকে গিয়ে থাকেএ তো সাধারণ বুদ্ধির কথা! সাব-ইন্সপেক্টরও একই ব্যাপার লক্ষ্য করেছে সে ইঙ্গিতপূর্ণ চোখে সত্যর দিকে তাকাল সত্য একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, “বোঝাই যাচ্ছে এরা এই ব্যাপারে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে যাক গেচলি দেখা হবে”

  গাড়ির দিকে হাঁটা দিলো সত্য কয়েক পা যেতেই তার পকেটে ফোন বেজে উঠলো এসিপি-র কাছ থেকে মেসেজ এসেছে লেখা আছে, “খামোখা ছোটাছুটি করানোর জন্য দুঃখিত রিপোর্ট দিতে হবে না বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করো”

  ফোনটা মুঠোয় চেপে ধরে মনে মনে এসিপি-কে বেশ কয়েকটা গাল দিলো সত্য

  আজকের দিনটা বেশ ভালোভাবেই শুরু হলো



                                

  “এখন তো ওরাই সবআমাদের আর দরকার কি বল!” ভর্তি পেটে হাত বুলিয়েমুখভর্তি সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বললো কুশ সত্য মৃদু হেসে সোফায় শরীরটা এলিয়ে দিল তার চোখ পড়ল ক্যালেন্ডারের দিকে... আঠাশে নভেম্বরদু হাজার চল্লিশআর মাস তিনেক পরে সেই ভয়াবহ দিনটার স্মৃতির চার বছর পূর্ণ হবে

  তখন মার্চ মাস একটা মাল্টিন্যাশনাল ব্যাঙ্কে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিল সত্য আর কুশ তখন একটা বড় মিডিয়া হাউসে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরীর কাজ করত

  অফ সিজনে ছুটি পেয়ে পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে সস্ত্রীক গ্যাংটক বেড়াতে গিয়েছিল সে ভোর রাতে হঠাৎ খবর আসেদিল্লির আকাশে শুরু হয়েছে বিমান-যুদ্ধ

  কিছুক্ষণ পর থেকে আসতে থাকা টুকরো টুকরো খবরে জানা যায় পুরো ঘটনাটা- একদল প্রশিক্ষিত উগ্রপন্থী পাকিস্তানের এক সামরিক বিমানঘাঁটির দখল নিয়ছে আর সেখান থেকে গোটা পাঁচেক সুপারসোনিক বোমারু যুদ্ধবিমান নিয়ে সরাসরি দিল্লি আক্রমণ করে বসেছেপ্রায় আত্মঘাতী অপারেশন গোটা দেশ সেদিন দমবন্ধ করে নিউজ চ্যানেলগুলিতে দেখল সূর্যোদয়ের পটভূমিকায় রাজধানীর আকাশে দুই দেশের যুদ্ধবিমানের লড়াইয়ের সরাসরি সম্প্রচার তারপর সব বদলে গেল

  ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চূড়ান্ত অস্থিরতার সৃষ্টি হলআর পারষ্পরিক অবিশ্বাসের জেরে দুই দেশ প্রায় যুদ্ধের পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেল দেশের সব কয়টি বড় শহরে রেড অ্যালার্ট জারি হলআর গোটা দেশে লাগু হল জরুরী অবস্থা

  জরুরি অবস্থা চলাকালীন সত্য আর কুশ দুজনেই সেনাতে নাম লেখাতে চেয়েছিলকিন্তু ট্রেনিং না থাকায় সরাসরি ফ্রন্টে পাঠানো হয়নি তাদের বরং ওরা দুজনে কিছুদিন ধরে ফ্রিল্যান্স প্রাইভেট ডিটেকটিভ হিসেবে কাজ করেছিল জেনে তাদের সি আই ডি-র একটা বিশেষ টিমে নেওয়া হয়েছিল যার কাজ ছিল কলকাতা ও রাজ্যের অন্যান্য অংশে বিদেশি গুপ্তচরের সন্ধান করতে সেনার লোকেদের সাহায্য করা  

  দিল্লির আকাশে যুদ্ধ চলেছিল কয়েক ঘন্টা আর সীমান্তে চরম উত্তেজনা স্থায়ী হয় প্রায় এক সপ্তাহ বড় ধরণের সংঘর্ষ শেষ পর্যন্ত্য এড়ানো গেলেও এই ঘটনার প্রভাব দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে বদলে দেয়

  দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষায় সেনাবাহিনীর গুরুত্ব একলাফে বেড়ে যায় নতুন সেনা ভর্তির সংখ্যা একলাফে তিন গুণ হয়ে যায়আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দেশের সুরক্ষা বাজেট গোটা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশাল সেনা ঘাঁটি তৈরী হয়আর তাদের মুখ্য কমান্ড সেন্টার সরিয়ে আনা হয় কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামেপাকিস্তান সীমান্ত থেকে দুরে আর সব কটি ঘাঁটির আশেপাশের অঞ্চলে সেনাবাহিনীর হাতে আত্মরক্ষার খাতিরে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়যার পোশাকি নাম “আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার্স  অ্যাক্ট” বা “আফস্পা” এর ফলে সেনাবাহিনীর হাতে সন্দেহের বশে বলপ্রয়োগ করার আর আইন-রক্ষায় স্থানীয় পুলিশের উর্দ্ধে থাকার অধিকার চলে আসে ফলে গোটা দেশ কার্যতঃ এক আধা-সামরিক শাসনের আওতায় চলে যায়

  দেশের অর্থনীতিতেও তীব্র মন্দা দেখা দেয় সত্যর ব্যাঙ্ক তড়িঘড়ি ভারত থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলে আর কুশের মিডিয়া হাউসও লোকসানের ছুতোয় অর্ধেক কর্মচারী ছাঁটাই করে দেয়

  ভাগ্যক্রমে ইমার্জেন্সির সময়কার তাদের কাজ ওপরমহলের নজর এড়ায়নি কাজ খুইয়ে দুজনেই যখন দিশেহারা তখন সি আই ডি থেকে তাদের জন্য পাকা চাকরির প্রস্তাব আসে হাতে স্বর্গ পায় দুজনেই তারপর কয়েক মাসের ট্রেনিং আর গোটা তিনেক পরীক্ষায় পাশ-নম্বর তোলার ব্যাপার অচিরেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিগ্রিধারী দুই বাল্যবন্ধু হয়ে ওঠে সি আই ডি-র বেতনভোগী জুনিয়র ইন্সপেক্টর

  পরের তিন বছর কষ্টে কাটে সত্যর আগে থেকে জমানো অর্থ যথেষ্ট নয়তাই দাঁতে দাঁত চেপে টাকা জমিয়ে তুলে নিজের আট বছরের একমাত্র মেয়েকে স্কটল্যান্ডের একটা বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেয় সেএই অশান্ত দেশ থেকে তাকে যত দুরে রাখা যায়ততই ভালো

  কুশের কোথায় সম্বিৎ ফিরল সত্যর, “অফিসার্স ফুটবল শিল্ডের খেলার দিনগুলো ঠিক হয়েছে কাল

  “আমাদের প্রথম ম্যাচ কাদের সাথে?” সত্য মাথা সোজা হয়ে বসল

  “জলপাইগুড়ি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট,” বলল কুশ

  “হাঃগেলবার তিন গোলে হারিয়েছিলাম

  “উঁহুএবার অত সহজ হবে না,” মাথা নাড়ল কুশ “ওদের নাকি কতগুলো ইয়ং ছেলে এসেছে পাহাড় থেকে ট্রান্সফার হয়েএবার সিরিয়াসলি না খেললে প্রথম রাউন্ডেই... আচ্ছা তুই কি আদৌ আর দৌড়স-টৌড়স নাকি...”

  “আমার ফিটনেস নিয়ে এত চিন্তা?” সত্য ভুরু তুলল, “আর তোমার যে গুরু সিগারেটের কোটা দিন দিন বাড়ছে?”

  “কে বলল...” কুশ খুব জোর দিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই ঐশী এসে ঢুকল

  ঐশীকুশের স্ত্রী ও মিডিয়া হাউসের প্রাক্তন সহকর্মীএখন একটা বাংলা নিউজ চ্যানেলে সাংবাদিকের কাজ করে এতক্ষণ সে তাদের বছর দুয়েকের ছেলে রণ-কে ব্রেকফাস্ট করাচ্ছিল সামনের টেবিল থেকে নিজের ল্যাপটপ তুলে নিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে ঐশী বলল, “সত্যদা ঠিক-ই বলেছে নিজের না হোক ঘরে ছোট ছেলে আছে তার কথা তো ভাববে?”

  “ওর আশেপাশে তো আমি কখনও খাই না?” কুশ প্রতিবাদ করল

  “হুঁ,” এক মুহুর্তের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে গেল ঐশী তারপর ল্যাপটপের স্ক্রীণ উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ধরে বলল, “সত্যদাতুমি ইন্টারনেট সেলিব্রিটি হয়ে গেছ

  “কি ওটা?” সত্য সোজা হয়ে বসল

  “রাজভবনের সামনে তোমার আর একজন আর্মি অফিসারের কথা বলার ভিডিও কেউ সেলফোনে রেকর্ড করে ইউটিউবে আপলোড করে দিয়েছেআর আমাদেরকে সেটার লিঙ্ক পাঠিয়েছে চ্যানেলে দেখানোর সাজেশন দিয়ে

  “কথাগুলো শোনা যাচ্ছে নাকি?” সত্য চিন্তায় পড়ল

  “নাকিন্তু যা দেখা যাচ্ছে সেটা কম কিছু নয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আর্মি অফিসার তোমাকে কাঁচকলা দেখিয়ে গট গট করে চলে গেলআর তুমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলে

  “কই দেখি দেখি...” কুশ মহা খুশি হয়ে স্ক্রীনের ওপর ঝুঁকে পড়ল “আহাসতেকি প্রাইসলেস এক্সপ্রেসন!”

  “এটা চ্যানেলে দেখাবে নাকি?” সত্য চিন্তায় পড়ল

  “না:এডিটর বলেছেন ওপর থেকে নির্দেশ এসেছে এই ব্যাপারটা নিউজে যাবে না,” মাথা নাড়ল ঐশী “আর এই ভিডিওটাও সম্ভভত: ব্ল্যাকলিস্টে চলে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেরি স্যাডএটা কভার করতে দিলে তোমার একটা রেসপন্স ইন্টারভিউ-ও নিয়ে নিতামআজকাল এক্সক্লুসিভ পাওয়া যা মুশকিল...”

  “ভিডিওটা হটিয়ে দেবেতার আগে একটা কপি ডাউনলোড করে রাখলে ভালো হয় নাসতের এমন সুন্দর ভিডিও...” কুশ খুব দুঃখ-দুঃখ গলায় বলে উঠল

  “এমন একটা ভিডিও আমার নিজের ল্যাপটপে ডাউনলোড করলে ঝামেলায় পড়ব আমি,” বলল ঐশী “জরিমানা হতে পারেবা তার চেয়েও খারাপ... আমার ন্যাশনাল ইন্টারনেট অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হয়ে যেতে পারে এক মাসের জন্য আর ইন্টারনেট ব্যবহার না করতে পারলে আমার চাকরিও চলে যাবে আজকাল সেন্সরের নিয়মগুলো যা কড়া হয়ে গেছে...”

  “ইসহতচ্ছাড়া সেন্সরের জন্য সতের ফেমাস হওয়াটা আটকে গেল...” কুশ জোরে জোরে দুদিকে মাথা নাড়ল সত্য অন্যমনস্কভাবে “হুঁ” বলল কুশ সামান্য দমে গিয়ে বলল, “কি রে কি হয়েছে?” 

  “কোথাও একটা কিছু মিলছে না,” সত্য বলল

  “এখনও আজকের সকালের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিস?” কুশ বলল, “ ভাবিস না রেঅত ভাবিস না যে ব্যাপারটা আর্মি দেখছে সেটা আমাদের মাথায় না ঢোকারই কথা যদি ঢুকততাহলে আর্মি রাখার দরকারই কি ছিল?”

  ঐশীর ফোন বাজল সে কথা বলার জন্য ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল কুশ সত্যর পাশে এসে বসল

  “এই আমাকেই দেখ না,” কুশ বলল “জানিসই তোকলকাতা পুলিশের বোধহয় সবচেয়ে হাই প্রোফাইল কেস এখন আমার ঘাড়ে স্কাই ফোন স্ক্যান্ডাল গেল বছর থেকে চলছে প্রথমে শোনা যাচ্ছিলনতুন ফোন কেনার পর অনেকেরই নাকি মাঝে মাঝে মাথা ঝিমঝিম করছেকান ভোঁ ভোঁ করছেকেউ কেউ আবার নাকি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে স্কাই-ফোন গোটা দেশে লোকে ব্যবহার করছিলকিন্তু বেশিরভাগ কেস এল কলকাতা বা তার আশপাশ থেকে মিডিয়ায় বিরাট হইচই হল স্কাই-টেকের নতুন স্মার্টফোন বিপজ্জনক প্রচুর এক্সপার্ট রায় দিলফোন ইউজ করলে ব্রেন ক্যান্সার হয় ইত্যাদি কেউ আবার বলল স্কাই-ফোনের মধ্যে যে দশ ব্যান্ডের রেডিও ট্রান্সমিটার থাকে সেটাই নষ্টের গোড়া কয়েকজন তো কলকাতার ভৌগলিক অবস্থানকেও দায়ী করে বসল ঝামেলার চোটে কয়েকদিন ফোনটা বিক্রিও বন্ধ থাকলকিন্তু ফাঁই ফক্কা কেউ সলিড কিছু পেল না স্কাই-ফোন আবার বিকোতে লাগল এরপর কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর আবার হেডলাইন লোকে নাকি সব ভুলে যাচ্ছেকেউ কেউ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির রাস্তা ভুলে যাচ্ছে কেউ কেউ আবার ঘুমের মধ্যে হাঁটছে আবার মিডিয়া আবার এক্সপার্ট ওপিনিয়ন সিবিআই থেকে তদন্ত পর্যন্ত শুরু হল কিন্তু কোথায় কিকিস্যু মিলল না যাদের প্রবলেম হচ্ছিল তারাও হঠাৎ করে সেরে গেল কয়েকজন তো আবার পাবলিসিটির লোভে মিথ্যে কথা বলছে বলে প্রমাণ হয়ে গেল কিন্তু ফোনটার দোষ কেউ ধরতে পারল না অবশেষে সবাই হাল ছেড়ে দিল খবর পুরনো হয়ে গেছিল তাই মিডিয়াও ব্যাপারটা ভুলে গেল আর সিবিআই-এর হোমরা-চোমরাদের খেয়ে দেয়ে অনেক কাজতাই কেসটা এর হাত ওর হাত ঘুরে আমার মত নশ্বর এক সি আই ডি চুনোপুঁটির টেবিলে এসে থামল

  “নিয়ে?  তুই কিছু করলি না?” সত্য বলল

  “ওইখানেই তো কবি কেঁদেছিলেন,” বলল কুশ “লীড তেমন ছিল নাআইডিয়া ছিল একটা স্কাই ফোনকে বদনাম করে অন্য কোম্পানীগুলো ফায়দা লুটতে চাইছে না তোজাস্ট সন্দেহের বশে একটা ক্যাজুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড চেক শুরু করেছিলাম সঙ্গে সঙ্গে ওপর থেকে নির্দেশ এলওসব নিয়ে ভাবতে হবে নাওগুলো নিয়ে আগেই খতিয়ে দেখা হয়েছেআর কিছু পাওয়া যায় নি মজার ব্যাপারসিবিআই-এর ইনভেস্টিগেশন লগ-এ কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু ছিল না কিন্তু অর্ডার ইজ অর্ডারতাই নাবিশেষ করে যখন ঘরে বউ বাচ্চা আছে আজকালকার দিনে একটা ডিসিপ্লিনারি চার্জ নামের পাশে লেগে গেলে নিজের জীবন তো চুলোয় গেলইফ্যামিলির লোকেদেরও বছরের পর বছর হ্যারাস হতে হবে,” কুশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল

  “এই অর্ডারের কথাটা তো আগে বলিসনি?” সত্য নীচু গলায় বলল

  “বলে কি লাভ?” কুশ বলল, “কিছু করেও কি লাভএই চাকরিটা করেই বা কি লাভ হচ্ছেএই কেসটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেআমরা খালি ইয়েস ম্যানের কাজ করি যা কথা বলবে শুনে চলতে হবে নইলে সোজা...”

  ঐশী ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকল ওরা থমকে গিয়ে তাকাল ঐশী বলল, “আমাকে বেরোতে হবে গঙ্গায় একটা ডেডবডি ভাসতে দেখা গেছেকভার করতে বলা হয়েছে আমাকে

  সত্য এক লহমায় সোজা হয়ে বসল, “গঙ্গা মানে ঠিক কোথায়?”

  “মেটিয়াবুরুজ ফেরী ঘাটের কাছে,” ঐশী তৈরী হতে ভেতরের ঘরে ঢুকে গেল

  সত্য সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে ফোন বার করে তার স্ক্রীনে মন দিল কুশ বলল, “কি করছিস?”

  “ইন্টারনেটে গঙ্গার জোয়ার-ভাটার টাইমিং দেখছি,” সত্য বলল

  “তুই কি সন্দেহ করছিস...” কুশ কথার মাঝখানে থেমে গেল ঐশী তীরবেগে তার হাতব্যাগে একটা ট্যাবলেট-কম্পিউটার ভরতে ভরতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলকুশের দিকে তাকিয়ে একবার হাত নাড়লআর বাইরের দরজা দিয়ে প্রস্থান করল

  “তিরিশ সেকেন্ডও লাগল না রেডি হতে,” কুশ অবিশ্বাসের গলায় বলল “আর গত সপ্তাহে সায়েন্স সিটি যাওয়ার সময় দু’ঘন্টা লাগিয়েছিল!”

  “যা ভেবেছি তাইভোর পাঁচটা থেকে টানা ভাটা চলছে” সত্যও উঠে পড়ল “আমিও এলাম বুঝলিকাজ করতে হবে কয়েকটা

  “তুই আবার কোথায় চললি?” কুশ আশ্চর্য হয়ে গেল

  “অফিসেএসিপি-র সাথে কথা বলতে,” বলল সত্য

  “তুই কি ভাবছিস এই গঙ্গায় মৃতদেহের সাথে তোর ভূমিকম্প কেসের কোনও যোগ আছে?”

  “হয়তো আছেহয়তো নেই,” বলল সত্য “কিন্তু রাজভবনের সামনের নর্দমাটার সাথে যে গঙ্গার সরাসরি যোগ আছে সেটা নিয়ে আমি নিশ্চিত

  “তাহলেও এটা খুব একটা প্রমিসিং লীড নয়,” বলল কুশ

  “লীড না হোকআইডিয়া তো বটে!” সত্য হালকা হাসল।