সেই দেখা হওয়ার পর থেকেই লোকটা এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন অচিন্ত্য ইন্টারভিউ নিতে নয়, দিতে এসেছে। আবার ভান করছে যেন বিশাল কিছু আবিষ্কার করেছে, ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। এরকম গ্রেট সায়েন্টিস্টদের হাড়ে হাড়ে চেনে সে। সবার মাথায় শুধু খবরের কাগজে নাম বের করার ধান্দা। এই বিজ্ঞানী, প্রাক্তন অধ্যাপক বিকাশ মহাপাত্র, তাদের এডিটর রাজেন্দ্রপ্রসাদ চৌধুরীর বাল্যবন্ধু না হলে মুখের ওপর জবাব দিয়ে দিত সে।
অচিন্ত্য প্রফেসরকে ভাল করে দেখল। ছিপছিপে, সাড়ে পাঁচের মত লম্বা, সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির ওপর ছাই রঙের চাদর। তেমন কোনও বিশেষত্ব নেই। পুরুলিয়ার কোন কলেজে যেন পড়াতেন এককালে। এডিটর সাহেবের কাছে শুনেছিল সে, হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় পৈতৃক বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন ভদ্রলোক। পুরনো বনেদী বাড়ি, টাকাপয়সার অভাব ছিল না। সেই থেকে নিজেকে প্রায় পুরোপুরিভাবে ঘরবন্দি করে ফেলেন। কি কারণে, তা তাঁর শ্রেষ্ঠ বন্ধু এডিটর সাহেবও বলতে পারেননি।
তালা খুলে দরজাটা মেলে ধরলেন বিজ্ঞানী। অচিন্ত্য এখন তাঁরই সঙ্গে তাঁর গবেষণাগারে। সমস্ত কেমিক্যালের মিশ্রিত গন্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে আঘাত করল অচিন্ত্যর নাকে। এই গন্ধ তার চিরকালের আকর্ষণ। নিজের ঘরে কেউ এত বড় ল্যাবরেটরি বানাতে পারে, ধারণা ছিল না তার। একনজরে সে যা বুঝল, ল্যাবটা মূলতঃ মাইক্রোবায়োলজির ওপর। বোতলবন্দী প্রাণী বা উদ্ভিদ খুব বেশি না থাকলেও দেওয়ালে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়ার ডায়াগ্রামের অভাব নেই। ঘরের এক কোনায় আবার দেওয়াল জোড়া গিনিপিগ ও মানুষের জিনের ডায়াগ্রাম। তারই সামনে বেশ বড় কিছু একটা ঢাকা দিয়ে রাখা আছে। প্রফেসর সেদিকেই এগিয়ে গেলেন। অচিন্ত্য অনুসরণ করল।
সেই ঢেকে রাখা বস্তুটির ওপর হাত রেখে প্রফেসর বললেন, “জিনতত্ত্বের বোঝো কিছু? জিনপ্রযুক্তিকে আমি অভিনবভাবে ব্যবহার করেছি।”
অচিন্ত্য এই একই কথাটা বিভিন্নভাবে শুনে আসছে এনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে। সে আর থাকতে না পেরে
বলল, “আপনি কি বলছেন কিছু বুঝতে পারছি না।”
“বুঝবে, বুঝবে,” মৃদু হাসলেন প্রফেসর, “ তার আগে যে এই কাজ করতে পারে তার সঙ্গে আলাপ সেরে নাও।”
তিনি জিনিসটার ওপর থেকে ঢাকা সরিয়ে নিলেন। কাপড়ের তলা থেকে বেরিয়ে পড়ল অচিন্ত্যর দেখা সবচেয়ে অদ্ভূতুড়ে যন্ত্রটি।
“জি সি এম আর!” ঘোষণা করলেন প্রফেসর, “ জেনেটিক কোড মডিফাইং রেডিয়েটর!”
এক দিকে টেবিল ল্যাম্পের মতো বাঁকানো একটা যন্ত্রাংশ, মুখটা সরু নলের মতো। পাশেই প্রায় সাড়ে ছ’ ফুট লম্বা নরম ফ্লোর, মনে হয় পরীক্ষাধীন ব্যক্তি বা প্রাণীকে শুইয়ে রাখার জন্য। টেবিল ল্যাম্পের মত জিনিসটা সেদিকেই তাক করে আছে। পুরোটাই একটা নলাকার কাচে ঢাকা। নলের একপাশে দরজা। ভেতরে উষ্ণতা ও বায়ূচাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও আছে। বাইরে পাইলটের ড্যাশবোর্ডের মতো কন্ট্রোল প্যানেল, প্রতিটি বোতামের তলায় হাতে লেখা লেবেল সাঁটা। অচিন্ত্য অবাক চোখে দেখতে লাগল।
“এবার ইন্টারভিউ শুরু হোক। নিজের প্রশ্নের মাধ্যমেই জেনে নাও ব্যাপারটা।”
অচিন্ত্য তাড়াতাড়ি কাঁধের ব্যাগ থেকে টেপ রেকর্ডার বার করে কন্ট্রোল প্যানেলের পাশে রেখে প্রফেসরের দিকে ফিরল।
“আপনার এই জি সি এম আর কি? এর কাজ কি?”
প্রফেসর বললেন, “ এর নামের মধ্যেই আছে এর কাজ। এটা একটা রেডিয়েটর। ওই যে নলটা দেখছ, এর সাহায্যে একটি বিশেষ অনুপাতে আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি পরীক্ষাধীন ব্যক্তির ওপর ফেলা হয়। অনুপাতটা বলা যাবে না ফর অবভিয়াস রিজনস।”
“কিন্তু কোনও মানুষের ওপর এই রেডিয়েশন প্রয়োগ করার উদ্দেশ্য কি?” জিগ্যেস করল অচিন্ত্য।
“কোনও জীবের শরীরের অনেক বৈশিষ্ট্যই জিনের ওপর নির্ভরশীল, জানো তো?”
“প্রায় সবই।”
“তাহলে সেই জিনের গঠন বা জেনেটিক কোড বদলে দিলে তার শরীরটাও বদলে যাবে, তাই না?”
“মিউটেশন?” সামান্য আগ্রহী হল অচিন্ত্য, “কিন্তু সে তো নিয়ন্ত্রণ করা...”
“...এখনও পর্যন্ত্য যায়নি, তাই তো?” মৃদু হাসলেন প্রফেসর। অচিন্ত্য একটু অবাক হল। ইনি যেদিকে ইঙ্গিত করছেন সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে এটা একটা বড় খবর।
“এই যন্ত্রের সাহায্যে একটা বিশেষ ধরণের মিউটেশন সৃষ্টি করা যায় প্রাণীর দেহে,” বললেন প্রফেসর। “এর প্রভাবে যে কোনও কোষের নিউক্লিয়াসকে চার হাজার গুণ জটিল করে দেওয়া যায়। যার ফলে নিউক্লীয়লাসের গ্রানিউল অঞ্চলে একরকম সেনসরি পার্টিকল সৃষ্টি হয়, যা আয়তনে নিউরোনের আড়াই লক্ষ ভাগের এক ভাগ হলেও দেড় গুণ বুদ্ধির উদ্দীপক হবে।” অচিন্ত্যর হাঁ মুখ লক্ষ্য করতে করতে বললেন প্রফেসর, “প্রতিটি কোষের মধ্যে মস্তিষ্ক সৃষ্টি হবে।”
অচিন্ত্য তাকিয়ে থাকল।
অধ্যাপক বলে চললেন, “এর ফলে প্রতিটি কোষের মধ্যে সমস্ত গুণ উৎপন্ন হবে যা একটি প্রাণীদেহে থাকে। কোষ বাড়বে, সংকুচিত হবে নিজের ইচ্ছেয়, আর অবিশ্বাস্য গতিতে। এরা একে অপরের সঙ্গে কমিউনিকেট করবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, কখনও কখনও পরিস্থিতি অনুযায়ী এরা এক সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করবে। টিমওয়ার্ক।”
অচিন্ত্য কি বলবে কিছু ভেবে পেল না। সরাসরি তার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রফেসর বললেন, “পরখ করে দেখতে চাও?”
জবাবের অপেক্ষা না করেই তিনি একটি নীলচে তরলে ভর্তি টেস্ট টিউব তুলে নিয়ে একটি স্লাইডে দু’ফোঁটা ফেলে অচিন্ত্যকে দিয়ে বললেন, “মাইক্রোস্কোপে দ্যাখো।”
অচিন্ত্য কাছের মাইক্রোস্কোপে স্লাইডটা রেখে দেখল, তরলের মধ্যে অজস্র নীলচে কোষ ভেসে বেড়াচ্ছে। কোষগুলো চেনা মনে হলেও ঠিক কোন কোষ মনে পড়ল না তার। সম্ভবতঃ ওই অস্বাভাবিক রংটার জন্য।
“চিনতে পারছ?” প্রফেসর জিজ্ঞাসা করলেন।
“চেনা চেনা মনে হচ্ছে, তবে ঠিক প্লেস করতে পারছি না,” বলল অচিন্ত্য।
প্রফেসর হাসলেন, “মানুষের স্কিন সেল।”
“ওঃ!” মনে পড়ে গেছে অচিন্ত্যর, “আসলে ওই নীলচে রংটা...”
“রেডিয়েশনের প্রভাবে,” বললেন প্রফেসর। “আমার রেডিয়েটর এদের মস্তিষ্ক দিয়েছে। এরা প্রত্যেকে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।”
“কিন্তু প্রফেসর, মেথিলিন ব্লু সলিউশনেও তো...”
“এখানে কি রংটা একেবারে সেইরকম?”
একটু ভাবল অচিন্ত্য, “না মনে হয়।”
“এই নীল অন্য, এই নীল আমি নিজে আগে কখনও দেখিনি,” বললেন অধ্যাপক। “আর তাতেও যদি বিশ্বাস না হয় এই দ্যাখো।”
তিনি লেবেল মারা একটা কাচের বোতল বের করে অচিন্ত্যকে দেখিয়ে বললেন, “গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড।” তারপর নীলচে তরলের স্লাইডে দু ফোঁটা অ্যাসিড ফেলে বললেন, “জলদি দ্যাখো!”
অচিন্ত্য মাইক্রোস্কোপে চোখ রেখে দেখল, নীলচে কোষগুলো হঠাৎ কালো হয়ে গেল। প্রথমে পুড়ছে মনে হলেও পরক্ষণেই বুঝল, কোষগুলো ঠিকই আছে, শুধু রংটাই বদলে গেছে। সে চোখ তুলে দেখল, নীলচে তরল পুরোপুরি কালো হয়ে গেছে।
“বর্ম,” বিজয়ীর হাসি হাসলেন প্রফেসর। “প্রটেকশনের জন্য। আর এখানেই শেষ নয়, দ্যাখো এবার কি হয়।”
অচিন্ত্য ফের মাইক্রোস্কোপে চোখ রেখে দেখল, কালো বর্ম ভেঙে পড়ছে তরলের তলানিতে, আর কোষগুলোর সেই নীলচে রং আবার দেখা যাচ্ছে। সে জিজ্ঞাসু চোখে প্রফেসরের দিকে তাকাল।
“বর্মটা হল সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড, ক্ষার,” প্রফেসর বললেন। “সালফিউরিক অ্যাসিডকে ধরে একেবারে প্রশম বানিয়ে দিল। বিক্রিয়ায় উৎপন্ন সোডিয়াম সালফেট নীচে থিতিয়ে পড়ল আর কোষগুলো বেঁচে গেল।
অচিন্ত্য বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, “কিন্তু বর্মটা এল কোথা থেকে?”
“আমার কাছে যা অ্যাপারেটাস আছে তাতে সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়,” একটু গম্ভীর গলায় বললেন প্রফেসর। “তবে এটা পরিষ্কার যে এসব হচ্ছে ওই মস্তিষ্কের জন্য।”
অচিন্ত্যর গলায় আটকে থাকা সমস্ত উত্তেজনা এবার ছিটকে বেরিয়ে এল। সে শুন্যে দু’হাত ছুড়ে বলল. “অভাবনীয়! আমি তো ভাবতেই পারছি না যে এতবড় একটা আবিষ্কার ভারতে, কলকাতায় হয়েছে! কিন্তু এই রেডিয়েশন কোনও উদ্ভিদ বা প্রাণীদেহে প্রয়োগ করলে কি হবে?”
“আমি কোনও উদ্ভিদের ওপর এর প্রয়োগ করিনি,” বললেন প্রফেসর। “তবে গিনিপিগের ওপর পরীক্ষা করার সময় দেখেছি সমস্ত ক্ষেত্রে রেডিয়েটেড বডি পার্ট নীল হয়ে যায় আর সেটা আশ্চর্য্যজনকভাবে যে কোনও আঘাত বা রোগ জ্বালা প্রিভেন্ট করতে পারে।”
“তার মানে তো একে দিয়ে রোগ বা আঘাতের চিকিৎসাও হতে পারে!”
“একদম ঠিক,” হেসে বললেন অধ্যাপক। “রোগ বা আঘাতগ্রস্ত শরীরের অংশকে বা দরকার হলে পুরো শরীরকে রেডিয়েট করলেই পূর্ণ আরোগ্য। তারপর আমার তৈরী অ্যান্টিডোট ক্যাপসুল খাইয়ে শরীর নর্ম্যাল করে দেওয়া যাবে, অবশ্য যদি নীলচে শরীর জিনিসটা ফ্যাশন না হয়ে দাঁড়ায়।”
“কিন্তু এই রেডিয়েশন তো চামড়ার ওপরেই কাজ করে। রোগ বা আঘাত যদি হাড়ে হয়?”
“এই যন্ত্রে রেডিয়েশনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে বা কমিয়ে চামড়া, হাড় সবকিছুকেই এর আওতায় আনা যায়,” বললেন প্রফেসর। “ভেবে দ্যাখো, এর সাহায্যে পোলিও, পক্ষাঘাত, ক্যান্সার, এইডস... সমস্ত সারানো যেতে পারে। কোনও রোগই নেই যেটা এর সাথে মোকাবিলা করতে পারে। এই যন্ত্র চিকিৎসাশাস্ত্রে বিপ্লব আনবে।”
অচিন্ত্য যেন স্বপ্ন দেখছিল। এতবড় আবিষ্কার, সে ছাপবে ওয়ার্ল্ড এক্সক্লুসিভ খবর... ইন্টারভিউ... কিন্তু কিছু যেন একটা মিলছে না।
“তবে এর ফাইনাল স্টেজ এখনও বাকি,” প্রফেসর বলে চললেন। “মানুষের ওপর এর পরীক্ষা করা হয়নি এখনও। সেটা হয়ে গেলেই এটা গোটা বিশ্বে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।”
অচিন্ত্য চুপ করে রইল। অধ্যাপক একটু অবাক হলেন, “কিছু বললে না যে?”
অচিন্ত্য আস্তে করে বলল, “আপনি এত বড় একটা আবিষ্কারের খবর কোনও রেপুটেড সায়েন্টিফিক জার্নালে না দিয়ে একটা খবরের কাগজকে জানাচ্ছেন কেন?”
প্রফেসর কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলেন, তারপর হেসে ফেললেন। “ধরে ফেলেছ দেখছি,” বললেন তিনি। অচিন্ত্য কিছু বলল না।
প্রফেসর তার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, “ঠিকই বুঝেছ তুমি। আজকে তোমাকে ডাকার উদ্দেশ্য ইন্টারভিউ দেওয়া নয়, তোমাদের পেপারে একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া।”
“বিজ্ঞাপন?”
“হ্যাঁ, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য ভলান্টিয়ার চেয়ে। যে কোনও বয়সের হলেই হবে, আর প্রাণের কোনও ঝুঁকি নেই। কিন্তু তাকে সবকিছু গোপনে রাখতে হবে আর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত্য তাকে এখানেই থাকতে হবে।”
অচিন্ত্য বলল, “কিন্তু তার জন্য আমাকে ডাকলেন কেন? কাগজে বিজ্ঞাপন তো আপনি নিজেই দিয়ে দিতে পারতেন।”
প্রফেসর কয়েক মুহূর্ত মৌন থেকে তারপর বললেন, “আমাকে ভুল বুঝো না। তুমি বিজ্ঞান নিয়ে লেখো, এখানকার পলিটিক্স সম্পর্কেও নিশ্চয়ই জানো। কাজ শেষ হওয়ার আগে এই গবেষণার খবর বাইরে প্রকাশ হয়ে গেলে আমার পেছনে এজেন্ট লাগবে। ফর্মূলা হাতিয়ে ওরা নিজেরাই পেটেন্ট নিয়ে নেবে। টাকার জন্য ওরা সব কিছুই করতে পারে। এমনটা হোক তুমিও নিশ্চয়ই চাইবে না। তাই আমার ইচ্ছা ছিল স্বেচ্ছাসেবক বাছাই করার কাজটা তুমিই দেখ। এসব ব্যাপার তুমি আমার চেয়ে ভালো বুঝবে, কে বিশ্বাসী হবে আর কে হবে না।”
“আমাকেই বা এত বিশ্বাস করছেন কি করে?” অচিন্ত্য প্রশ্ন করল।
“তোমাদের এডিটর, রাজেন, ও-ই বলল তোমাকে চোখ বুজে দায়িত্ব দেওয়া যায়,” হাসলেন প্রফেসর। “আর তাছাড়া বিজ্ঞানের পাতায় তোমার লেখা তো কম পড়িনি। সেরকম একজন বুঝিয়ে লোককে নিজের কীর্তি নিয়ে ফলাও করে বলার লোভটাও বহুদিন ধরে ছিল।”
অচিন্ত্য-ও হালকা হেসে ফেলল, কিন্তু কিছু বলল না। প্রফেসর জিজ্ঞাসু চোখে তার দিকে তাকালেন, “এখনও কিছু বলছ না যে? নো কমেন্টস? দ্যাখো তুমি যদি কাজটা না করতে চাও, স্বচ্ছন্দে বলতে পারো। কোনও অসুবিধা নেই।”
“না... সেটা নয়,” বলল অচিন্ত্য। “আসলে, আমি অন্য একটা কথা ভাবছিলাম।“
“কি কথা?”
“আপনি আমাকেই ভলান্টিয়ার করে নিন।“
কথাটা শুনে প্রফেসর প্রথমে একটু অবাক হলেন। তারপর মুচকি হেসে বললেন, “ তুমি? বটে? তাহলে যে তোমার একটা ইন্টারভিউ নিতে হচ্ছে!”
-----
ফ্ল্যাটে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেল অচিন্ত্যর। ফিরে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় বসে বহুক্ষণ ভাবল সে, কাজটা ঠিক হল কি না।
মাস ছয়েক আগে বাম হাতটা ঝিমঝিম করতে শুরু করেছিল তার। প্রথমে সে জিনিসটাকে খুব একটা আমল দেয় নি। কিন্তু কিছুদিন পরে সেটা কমছে না দেখে ডাক্তার দেখায় সে। রিপোর্ট আসে মারাত্মক।
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি। একটা স্নায়বিক রোগ যা আক্রান্ত অঙ্গকে ধীরে ধীরে বিকল করে দেয়। তারপর আস্তে আস্তে সর্ব শরীরে সংক্রামিত হয়ে রোগীকে অথর্ব করে দেয়। আর সবশেষে আসে মৃত্যু। খুবই ধীরে ধীরে। কষ্ট জিইয়ে রেখে রেখে।
অচিন্ত্য এমনিতে চাপা স্বভাবের। এ কথাটাও সে চেপেই রেখেছে সকলের কাছ থেকে। কিন্তু সময়ে সময়ে এবার কি হবে, কখন হবে এই চিন্তাটা তাকে কুরে কুরে খায়। আজ এতদিন পরে সে প্রফেসরের কথায় হঠাৎ একটা আশার আলো খুঁজে পেয়েছে।
এই সারাক্ষণের ভয় থেকে মুক্তি পেতে গেলে এটুকু ঝুঁকি তাকে নিতেই হবে।
অচিন্ত্য একটা সুটকেসে কিছু জামাকাপড় ভরে নিল। কাল সকালে তাকে প্রফেসরের বাড়িতে গিয়ে উঠতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন সেখানেই থাকতে হবে তাকে। অবশ্য অফিস কামাই করতে হবে না। প্রফেসর বলেছেন, অন্য কাউকে এ ছাড় দেওয়া যেত না, কিন্তু তার ব্যাপার আলাদা। তাছাড়া হঠাৎ করে অফিস থেকে গায়েব হয়ে গেলে কারও সন্দেহ হতে পারে। আর সাংবাদিকদের সন্দেহের পাত্র হওয়াটা এ মুহুর্তে একেবারেই কাম্য নয়।
ব্যাচেলর হওয়ার এই একটা সুবিধে। যখন তখন যেদিকে খুশি বেরিয়ে পড়া যায়। অচিন্ত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
It is a habit of many gamblers that occasion that they} don’t have luck at one table, they will simply move to the next. Such casinos do not provide their own reside online roulette Malaysia video games. Instead, they rely upon the 1xbet providers of third get together providers such as Evolution, Playtech, Microgaming and Asia Gaming to take action.
ReplyDelete